ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষক রথীন্দ্র কুমার দাস স্মরণে শোকসভা টিলা কেটে সরকারি জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যানের বহুতল মার্কেট ছয় থানার ওসি বদলি কমিশনকে নজরে রাখবে রাজনৈতিক দলগুলো সালমান-আনিসুল হক ফের রিমান্ডে দেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা দেবে জার্মানি হাওরকে বাঁচতে দিন আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৪৭৬ প্রাণ কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর “অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে, তবে তা সীমাহীন নয়” ইজারাকৃত সব জলমহালের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ পদ হারিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরছেন আ.লীগ নেতারা সাবেক ৩ সিইসি’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইউনেস্কো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি প্রধান বিচারপতির ১২ নির্দেশনা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বিবেচনার অনুরোধ

ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন কারা?

  • আপলোড সময় : ০২-০৮-২০২৪ ১২:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৮-২০২৪ ১২:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন
ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন কারা?
আগে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু এখন অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। ৬ মাসের ব্যবধানে হাতে রাখা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের পর ব্যাংকিং সিস্টেমে আর প্রবেশ করেনি।

এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমানতের সুদহার বাড়তে বাড়তে এখন ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই সুদহার গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এমন আকর্ষণীয় সুদেও ব্যাংকে টাকা রাখার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন দেশের মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে পর্যন্ত এক বছরে ব্যাংক খাতের আমানত ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে ১৭ লাখ ৬০৮ কোটি টাকা হয়েছে। সাম্প্রতিক কোনও বছরে এত কম  প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে বাজারে ছাপা টাকার পরিমাণ রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। সাধারণত আমানতের বেশিরভাগ হয়ে থাকে অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মানুষ নগদ টাকা ব্যাংকে না রেখে হাতেই রাখছেন বেশি। এতে করে ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও বেড়েছে। এই তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তঃব্যাংক ধারের পরিমাণ বাড়ছে। পাশাপাশি সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ধার করতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর মাসের শেষে মানুষের হাতে থাকা তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। ৬ মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ গত জুন মাসের শেষে গ্রাহকদের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।  গত ৬ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের কারণে হাতে টাকা রাখার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। তিনি মনে করেন, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই এখন তুলনামূলক হাতে বেশি টাকা রাখছেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৪ জুলাই বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংক লেনদেন শুরু হয়। ওই দিন ব্যাংকে টাকা জমা রাখার বদলে উত্তোলন হয়েছে অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, কার্যত টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যাংক খোলার প্রথম দিন গত ২৪ জুলাই সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো মোট ২৯ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ধার করে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে নেয় তিন হাজার ৬৫১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তারল্য সংকট মোকাবিলায় প্রতিদিনই ধার করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ২৫ জুলাই কল মানিতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে তিন হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা ধার করেছে। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ২৮ জুলাই আবার ৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো। ২৯ জুলাই ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। ৩০ জুলাই ধারের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ৩১ জুলাই ব্যাংকগুলোকে ধার করতে হয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোটা আন্দোলন-পরবর্তী ৬ দিনে মোট ৪৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া হয়েছে। তবে গত ৫ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী পরিমাণ টাকা ধার দিয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। এর অন্যতম ছিল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, রোজা ও কোরবানির ঈদ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকের ওপর আস্থা হারানোর কারণেও এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মার্চে বেশ কিছু ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এই খবরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেন, যার ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

তবে চলমান ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ব্যাংক থেকে আরও বেশি মানুষ টাকা তুলে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত ঈদকে কেন্দ্র করে সব সময় সার্কুলেশন বাড়ে। আর ঈদের পরই তা আবার দ্রুত ব্যাংকে ফেরত আসে। কিন্তু এবার টাকা ফেরত আসছে কম। গত জুনের মাঝামাঝি ছিল ঈদুল আজহা। ঈদের আগে ১৩ জুন বৃহ¯পতিবার সার্কুলেশনে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সাধারণত সব সময় ঈদের পরের সপ্তাহে আবার প্রচুর টাকা ব্যাংকে ফেরত আসে। এবার দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম। ঈদের পরের দুই সপ্তাহে ব্যাংকে ফিরেছে মাত্র ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। গত রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে গত ১১ এপ্রিল সার্কুলেশনে ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে ২৫ এপ্রিল তা কমে ২ লাখ ৯১ হাজার ১৪২ কোটি টাকায় নামে। পরের সপ্তাহে আরও কমে ২ মে ২ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৭ কোটি টাকায় নেমেছিল।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বেসরকারি র্ব্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এর একটি কারণ হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া ও ব্যাংকের ওপর আস্থা হারানোর কারণে মানুষ ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, হয়তো অনিশ্চয়তা থেকেই মানুষ নিজের কাছে বেশি করে নগদ টাকা রাখছে। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকে জমা টাকা সময়মতো ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে আস্থাহীনতার কারণে অনেকেই নিজের কাছে নগদ টাকা রাখতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৫ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো আছে। বাকি ৩ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার মতো রয়েছে নিজের কাছে, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। মে মাস শেষে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যা আগের মাস এপ্রিলে ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা।  এর আগে ২০২২ সালের জুনে ব্যাংকগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকে নগদ টাকা রাখার পরিমাণ বেড়ে গত মার্চে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। -বাংলা ট্রিবিউন

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স